বাংলাদেশ পরিচিতি

বাংলাদেশ

প্রতিটি মুহূর্তে স্নেহ ও মায়ার জালে জড়িয়ে রাখে বাংলাদেশের রূপ রহস্য



এক নজরে বাংলাদেশ

নিজের দেশকে ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। নিজ দেশের মাটিকে বলা হয় সোনার চেয়েও খাঁটি। দেশের অলো, বাতাস আর প্রকৃতির অকৃত্তিম ভালোবাসা যেন এক অন্যরকম আকর্ষন হিসেবে কাজ করে। কিন্ত মুক্ত প্রকৃতির স্বাদ পাওয়া যেন তেন বিষয় নয়।

এর জন্য চাই সবুজের বিস্তীর্ন প্রান্তর, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর সমুদ্রের বিশালতায় ডুব দেয়া, সু-উচ্চ পাহাড়ের বুক বেয়ে ছুটে চলাসহ আরও কতো কি। এসব কিছুর স্বাদ পাওয়া যায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে।

“ বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার। জার্মানির ব্যাভারিয়া রাজ্যের দ্বিগুন বড় এই দেশটিতে বাস করে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ ”।

যদিও বর্তমানে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমে গেছে, তারপরেও দেশটির সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও অনেক বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ সালে এই দেশটির জনসংখ্য প্রায় ২০ কোটি অতিক্রম করবে।

এই দেশের অধিকাংশ স্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক মিটার উপরে অবস্থিত। যমুনা, গঙ্গা (পদ্মা) ও মেঘনা অববাহিকায় উর্বর পলিমাটি সম্পন্ন এই ব-দ্বীপটিতে প্রায় প্রতি বছরই মৌসুমী বন্যা হয়। এছাড়াও, প্রতি বছর বসন্তের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় এবং গ্রীষ্মের শেষে উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।

দেশটির মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ গ্রামে বাস করে এবং জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসাবে ক্ষুদ্রায়তন কৃষিকাজের উপর নির্ভর করে। এখানে ভূমির বন্টন অসম; ৪০ শতাংশ পরিবারের অধীনে মাত্র ৩% ভাগ জমি। মোট জাতীয় উৎপাদনের ২০ ভাগ কৃষিক্ষেত্র থেকে আসলেও, কৃষিখাতের গুরুত্ব রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

অলাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি এবং কেন্দ্রমুখী, জটিল ও স্লথগতির প্রশাসনযন্ত্র সম্পন্ন সরকারী খাত উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করছে। সরকারী খাত সম্পদের অপব্যবহারের দোষে দুষ্ট। এইসব সম্পদ দেশের উন্নয়নে আরও কার্যকর ভাবে কাজে লাগানো যেত। তাছাড়া এই খাতের কর্মদক্ষতা কম এবং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। জনগণের বার্ষিক মাথা পিছু আয় ৮৪০ আমেরিকান ডলার। ২০১২ সালের জাতিসংঘের জরিপে জানা যায়, এ দেশের ৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে (যাদের দৈনিক আয় ১.২৫ আমেরিকান ডলারের চাইতেও কম)। যদিও এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চূড়ান্তভাবে হিসেব করলে দেখা যায়, দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে আবার শতকরা ২০ শতাংশ মানুষকে হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়; তারা দৈনিক ১,৮৪০ চেয়েও কম ক্যালরি গ্রহণ করে এবং এদের বেশিভাগই যে কোন ধরণের উন্নয়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয়।

দমনমূলক ঐতিহাসিক সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, অজ্ঞতা এবং আইনগত বৈষম্যের কারনে এখানে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে। নিজের পরিবারে, সমাজে এবং এমন কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও। বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আইনসহ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় যেসব আইন রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায় না।

মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই অসন্তুষ্টজনক অবস্থানে রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য এমনকি সাংবাদিকদের উপরে আক্রমন হলেও রাষ্ট্র ভালো ভাবে তার সুরক্ষা দিতে পারছে না। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। বিশেষত বাংলাদেশের নারী এবং ভূমিহীন মানুষেরা বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহিংসতার শিকার হয়; মুলত জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, মারামারি, অপহরণ, ফতোয়া ও যৌতুক এর কারণে। মোট জনসাধারনের মধ্যে শুধুমাত্র ধনিক শ্রেনীই আইনের সঠিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। দরিদ্র শ্রেনীর অধিকাংশ মানুষ প্রায়শই ক্ষমতাশীল কতৃপক্ষ ও ধনী ব্যাক্তিদের সেচ্ছাচারের শিকার হয়। ক্ষমতার এই কাঠামো বিন্যাস গরীব মানুষদের দারিদ্রসীমার নীচে আটকে রাখছে।



Post a Comment

0 Comments